2,489 total views, 1 views today
আদতে মানুষের বিকাশ মাতৃগর্ভ থেকেই তো শুরু। যদিও জন্মের পর আমরা দুই ধরণের বিকাশ দেখতে পাই। শারীরিক ও মানসিক। আর আনুষ্ঠানিক শিক্ষাটাও মাতৃগর্ভে শুরু হয় বলে আমি মনে করি। যদিও সামাজিকভাবে শেখানোর বিষয়টা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও হয়ে আসছে। যেমন আমরা ঘটা করে মুখে ভাত তোলা, সাঁতার শেখানো, হাতেখড়িসহ নানা চর্চায় আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে আসি। আমিও এমন কানুনের বাইরে ছিলাম না। যদিও সব আনুষ্ঠানিকতা আমাকে ছোঁয়নি। আমাকে বিদ্যাচর্চার জন্য দেয়া হয়েছিলো হাতেখড়ি। কিন্তু মননখড়ি যে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি গুণাবলীর উপর নির্ভর করে তার প্রখরতা শিশুকাল থেকেই ছিলো। স্পর্শ-গন্ধ-দৃষ্টি।
মানে ওই সময়কার চিকন চিকন জিলাপি। জিলাপির রসে আমার নীল প্যান্ট মেখে গিয়েছিলো। তা দেখে সবাই হাসতে শুরু করলো। আর আমি লজ্জায় কুকড়ে গিয়েছিলাম।
অবশ্য বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষে (বালাপিডিয়া) উল্লেখ আছে, হাতেখড়ি হিন্দুধর্মীয় সংস্কার বিশেষ। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুর বিদ্যাচর্চা শুরু হয়। কিন্তু আমাদের সমাজে কিছু রিতি আছে যার আনুষ্ঠানিকতা ধর্মভিত্তিক হলেও চর্চায় আমরা তেমন করি না। তখন আমার বয়স কত হবে? একাডেমিক শিক্ষা সময় হিসেব করলে বড় জোর সাড়ে চার নতুবা পাঁচ বছর হবে। একদিন হাতেখড়ি দেয়ার আয়োজন করা হয়। বগা ইউনিয়নের রোববারের হাট থেকে নতুন শ্লেট ও চক কেনা হয়। ডাকা হয় একজন শিক্ষক। (যতদূর মনে পড়ে ওই শিক্ষকের নাম কালাম, মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন, আমরা তাকে কালাম হুজুর বলে ডাকতাম)।
হাতেখড়ি অনুষ্ঠানটি মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে, অর্থাৎ সরস্বতী পূজার দিন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। নিজ বাড়ি বা কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এটি সম্পন্ন হতে পারে বা সরস্বতী পূজামন্ডপেও এক সঙ্গে অনেক শিশুকে হাতেখড়ি দেওয়া যায় বলে বাংলাপিডিয়ায় উল্লেখ আছে। কিন্তু আমার হাতেখড়ি কোনো মাসের শুল্কা পঞ্চমী তিথি হিসেবে করে হয়েছে কিনা জানা নাই।
সে যাই হোক, আমাদের সামনের বারান্দায় হাতেখড়ির অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বাড়ির মুরুব্বিরা যোগ দেন। কালাম হুজুর তার বাহুতে আমাকে টেনে নিয়ে হাতে চক ও শ্লেট দিলেন। তিনি কিছু দোয়া-দুরুদ পড়ার পর হাত ধরে বাংলা বর্ণমালা শ্লেটে লেখালেন। তখন কয়েকবার দেখে দেখে রেখায় রেখায় ঘুরিয়েছিলাম। পরে মোনাজাত ও মিষ্টিমুখ। মানে ওই সময়কার চিকন চিকন জিলাপি। জিলাপির রসে আমার নীল প্যান্ট মেখে গিয়েছিলো। তা দেখে সবাই হাসতে শুরু করলো। আর আমি লজ্জায় কুকড়ে গিয়েছিলাম।
অবশ্য ২০১৯ সালে এসে হাতেখড়ির গল্প আর মানায় না। বর্তমানে ডিজিটালের এ যুগে হাতেখড়ির অ্যাপ রয়েছে বাজারে।
বলছিলাম জীবনখড়ির কথা। প্রকৃতপক্ষে জীবনের কোনো খড়ি আছে কি-না জানি না। যদি থাকতো ভালো হতো কি?। অস্তিত্বের নিরিখে শূন্যতা ছুঁয়ে ফেলার নামই জীবন। এমন চিন্তার প্রাসঙ্গিকতায় জীবনের শুরুতেও শূন্যতা বিরাজমান। তার মানে হচ্ছে জীবনের শুরুতেই জীবন থাকে। এই যে দুই শূন্যতা এবং দুই জীবনের মধ্যবর্তী সময়, তার সবটুকুই খড়িপূর্ণ। মানুষের আলাদাভাবে খড়ি গ্রহণ করার কোনো অর্থ বহন করে বলে মনে হয় না।